বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। এক কথায় বলতে গেলে ইসলামের শাশ্বত বাণী গুলোর অপব্যাখ্যা এবং সকল ধর্মের মুক্তভাবে সমালোচনা করাই এই লেখিকার কাজ। তবে অনেকেই মনে করে তসলিমা নাসরিন নাস্তিক নয় ইসলাম বিদ্বেষী। এবং ভারতের হিন্দুদের এজেন্ট।
অবাক করার মত ঘটনা হল, জীবনের এই প্রথম ভারতের মুসলিমদের হয়ে কথা বলেছে বিতর্কিত এই লেখিকা। শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তিনি লিখেছেন ভারতের মুসলিমদের মারধর করে দেশপ্রেম শেখানো হচ্ছে।
নিজের ভেরিফাইড অ্যাকাউন্টে তসলিমা লিখেন, ‘ভারতের হিন্দুত্ববাদীদের কেউ কেউ রাস্তা-ঘাটে নিরীহ গরিব মুসলমান পেলে তাদের জয় শ্রী রাম বলায়, সহজে না বলতে চাইলে মারধর করে হলেও বলায়। এসব সাধারণত হিন্দিতে বলে।
সেদিন বাংলার ট্রেনেও দেখলাম একই ঘটনা। এক হিন্দু-বাঙালি এক দিনমজুর মুসলিম-বাঙালির কাছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নাম জানতে চাইছে। বলতে না পারলে মারছে। তাকে দিয়ে বন্দে মাতরম বলালো, জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ালো।
অনেকে বিশ্বাস করে ভারতের মুসলমানদের দেশপ্রেম নেই। তাই মেরে ধরে দেশপ্রেম শেখানো হয় ওদের!
লেখাপড়া জানে না, বইপত্র পড়ে না, রেডিও টিভি শোনে না এমন অনেক হিন্দুও ভারতের রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর নাম বলতে পারে না, জাতীয় সংগীত গাইতে জানে না। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, এগুলো জানা মানে কি দেশপ্রেম থাকা?
ভারতের সবচেয়ে বড় শত্রুরা তো মন্ত্রীদের নাম ধাম ভালো জানে, জাতীয় সংগীতও সুরে গেয়ে শুনিয়ে দিতে পারে। কিন্তু তারা তো কয়েক হাজার কোটি বা কয়েক লক্ষ কোটি ভারতের টাকা তাদের বিদেশের ব্যাংকে পাচার করে, অথবা টাকা লুট করে দেশ থেকে পালিয়ে যায়।
বিজয় মালিয়া, নীরব মোদি, লোলিত মোদি, চেতান জয়ন্তিলাল সান্দেসারা, আশিস জবানপুত্র, রিতেশ জেইন, নীলেশ পারেখ — এরা তো কেউ মুসলমান নয়। যারা চোর নয়, ডাকাত নয়, দাঙ্গাবাজ নয়, শুধু মুসলমান বলেই — তাদের এইভাবে রাস্তাঘাটে হেনস্থা করা বন্ধ করা উচিত। ঘৃণা কোনো দেশের মঙ্গল বয়ে আনে না।
১৭ কোটি মুসলমান ভারতের নাগরিক, তাদের অপদস্থ করে, অপমান করে অথবা গোমাংস খেয়েছে এই অপরাধে পিটিয়ে লাশ বানিয়ে এত বড় জনসংখ্যা নিশ্চিহ্ন করা যাবে না। সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ, এদেরকে ঘেটোয় আটকে না রেখে মূলস্রোতে মিশিয়ে ফেলা, এদেরকে মসজিদ মাদ্রাসায় বন্দি না রেখে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা।
সব ধর্ম গোষ্ঠীতে খারাপ যেমন আছে, ভালোও তেমন আছে। ঘৃণা পেলে ভালোও খারাপ হতে চায়। সব মুসলমানকে মেরে তাড়িয়ে হিন্দু রাষ্ট্র হলেই যে ভারতের সব সমস্যা মিটে যাবে তা তো নয়।
ভারত যে অনেক জাত, অনেক ধর্ম, অনেক ভাষা, অনেক সংস্কৃতি নিয়ে একটি দেশ হিসেবে টিকে আছে, এটিই তো ভারতকে মহান করেছে। দেশ তো যে কোনও ভূখন্ডই হতে পারে, মহান হতে ক’টি দেশ পারে?’